ক্রীড়া ডেস্ক ॥ মালিকপক্ষ নিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকদের অসন্তুষ্টি নতুন কিছু নয়। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লেজার্স পরিবার ইউনাইটেডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফুঁসছেন অধিকাংশ সমর্থক। মালিকপক্ষ যে ব্যক্তিকে ক্লাব চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে, সেই এড উডওয়ার্ডের কারণে ক্ষোভটা আরও বেড়েছে দিন দিন। গত রোববার সমর্থকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছেন উডওয়ার্ড। ইউরোপিয়ান সুপার লিগ নামে এক বিদ্রোহী লিগে যোগ দিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগে আর মন ভরছিল না বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ইউনাইটেডসহ ইউরোপের ১২ দলের, তাই আরও অর্থের আশায় সুপার লিগ আয়োজন করতে চেয়েছিল তারা। সমর্থকদের প্রতিবাদ ও ফুটবল বিশ্বের কড়া প্রতিক্রিয়ার মুখে ছয় ইংলিশ দল প্রথমে এই লিগ থেকে নাম কাটিয়ে নেয়। দুই দিনের মধ্যেই মুখ থুবড়ে যায় হঠকারী সে পরিকল্পনা। ব্যর্থতার দায় মেনে মঙ্গলবার উডওয়ার্ড ইউনাইটেডের নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু সমর্থকদের ক্ষোভ এখনো পুরোটা কমেনি। গতকাল সেটা আরও একবার টের পেয়েছে ইউনাইটেড। ফুটবল বাদ দিয়ে শুধু ব্যবসাকেই মূল লক্ষ্য বানানো গ্লেজার্স পরিবারকে আর সহ্য করতে পারছে না, সে বার্তা আরও একবার পাঠালেন ইউনাইটেডের সমর্থকেরা। গতকাল ক্লাবের অনুশীলন মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন কিছু ইউনাইটেড সমর্থক। ক্লাবের মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে অসন্তোষের কথা জানতে গতকাল ২০ জনের মতো ইউনাইটেড সমর্থক ক্লাবটির অনুশীলন মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন। সকালে ক্লাবের ক্যারিংটন অনুশীলন মাঠে ঢুকে পড়া এই সমর্থকদের দাবি ছিল দুটি। প্রথমত, বর্তমান মালিকদের বিদায় এবং দ্বিতীয়ত, ক্লাবের সিংহভাগ মালিকানা সমর্থক বা ক্লাব সদস্যদের কাছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সপ্তাহের শুরুতে ঝড় তুলে দেওয়া সুপার লিগে জার্মান লিগের কোনো পরাশক্তির নাম ছিল না। এর পেছনে ক্লাবের কর্মকর্তাদের সদিচ্ছা যেমন ভূমিকা রেখেছে, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল জার্মান লিগের ক্লাবগুলোর মালিকানার ধরনের। সেখানে ক্লাবের ৫১ শতাংশ মালিকানা ক্লাবের সদস্যদের কাছে থাকে। ফলে চাইলেই ক্লাব নিয়ে যা ইচ্ছা তা-ই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেউ রাখতে পারে না। এ কারণেই যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পেয়েও ১২ দলের সঙ্গে নাম জড়ায়নি বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের। ইউনাইটেড সমর্থকেরাও এমন কিছু চাচ্ছেন। ক্লাবের অনুশীলন মাঠে ঢুকে পড়া সমর্থকদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘দল কখন খেলবে, সেটার সিদ্ধান্ত আমরা নেব (মালিক না)।’ আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘৫১ শতাংশ’, আর বহুদিন ধরেই প্রচলিত সেই দাবি, ‘গ্লেজার্সদের বিদায় চাই।’ ক্ষিপ্ত সমর্থকদের সামাল দিতে কোচ উলে গুনার সুলশারকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টার পর সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছেন সুলশার। কোচ ছাড়া নেমানিয়া মাতিচ, সহকারী কোচ ক্যারিক ও টেকনিকাল ডিরেক্টর ড্যারেন ফ্লেচারের সঙ্গে কথা বলার পরই মাঠ ছাড়তে রাজি হয়েছেন এই সমর্থকেরা। এ ব্যাপারে ক্লাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গতকাল সকাল ৯টার সময় একদল সমর্থক ক্লাবের অনুশীলন মাঠে ঢুকে পড়েন। ম্যানেজার ও অন্যরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সব বিল্ডিং সুরক্ষিত ছিল এবং তাঁরা চলে গেছেন।’ এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের অন্য পাঁচ ক্লাবের মতোই সুপার লিগে যোগ দিতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে ক্ষমা চেয়েছে ইউনাইটেড। ক্লাবের মালিক জোয়েল গ্লেজার খোলা চিঠিতে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। সুপার লিগের ধারণাও যে ব্যর্থ, সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন সুপার লিগের অন্যতম বড় আয়োজক জুভেন্টাসের চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া আনিয়েল্লি।
Leave a Reply